ছাগলের বৈশিষ্ট্য ও প্রজাতি

ছাগল আমাদের গৃহপালিত পশু গুলোর মধ্যে অন্যতম। আমাদের দেশে গ্রামে প্রায় সব বাড়িতেই ছাগল রয়েছে। ছাগল পালন লাভজনক এবং ছাগলের দুধ ও মাংস আমিষের চাহিদা পূরণ করতে সহায়তা করে। ছাগলের বৈজ্ঞানিক নাম Capra aegagrus হিরচুস এবং ইংরেজি নাম Goat। আমরা এখন বিভিন্ন প্রজাতির ছাগলের বৈশিষ্ট্য ও ছাগলের বিভিন্ন অসুখ ও তার প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।

ছাগলের ছবি


ছাগলের বৈশিষ্ট্য

পৃথিবীতে বর্তমানে প্রায় ৩০০ প্রজাতির ছাগল রয়েছে। প্রজাতি ভেদে এদের মধ্যে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এদের প্রত্যেকটির মধ্যে গায়ের রং, আকৃতির ক্ষেত্রে ভেদাভেদ রয়েছে। প্রজাতি অনুযায়ী এদের মাংস উৎপাদন ও কমবেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশ বর্তমানে ছাগল উৎপাদনে চতুর্থ ও ছাগলের মাংস উৎপাদনে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে।

ছাগল সাধারণত সবুজ ঘাস ও কচি লতাপাতা খেতে খুব পছন্দ করে। এরা ভিজা বা স্যতস্যাতে জায়গা পছন্দ করে না। উচু জায়গা বা মাচায় উঠে বসে থাকতে এরা পছন্দ করে।

বিভিন্ন প্রজাতির ছাগল

পৃথিবীতে প্রায় ৩০০ প্রজাতির ছাগল রয়েছে। এসব ছাগল পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় বসবাস করে। এদের প্রত্যেক প্রজাতির নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এর মধ্যে আমাদের দেশে পাওয়া যায় এমন কয়েকটি প্রজাতির ছাগলের প্রজাতি হলো আমাদের হরিয়ানা ছাগল, রাম ছাগল, ব্লাক বেঙ্গল ছাগল, তোতাপুরি ছাগল, যমুনাপাড়ি ছাগল, বিটল ছাগল, বারবারি ছাগল।

আমরা এখন এসব প্রজাতির ছাগল সম্পর্কে কিছু তথ্য জানার চেষ্টা করব।

ব্লাক বেঙ্গল ছাগল

আমাদের বাংলাদেশে ছাগলের জাত গুলোর মধ্যে ব্লাক বেঙ্গল ছাগল সবচেয়ে বেশি পরিচিত। এটি বাংলাদেশের স্থানীয় প্রজাতির ছাগল। মাংস উৎপাদনের জন্য ব্লাক বেঙ্গল ছাগল জনপ্রিয়। ব্লাক বেঙ্গল ছাগলের গায়ের রং কালো হয়। এদের শরীর খাটো ও পেশিবহুল। শিং ও গায়ের লোম খাটো হয় এদের।

ব্লাক বেঙ্গল ছাগল সাধারণত ১৪ মাসে দুইবার বাচ্চা দিয়ে থাকে। প্রাপ্ত বয়স্ক একটি খাসির ওজন ২৫-৩০ কেজি এবং একটি ছাগীর ওজন ২০-২৫ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। ২০০৭ সালে FAO বিশ্বের ১০০ টি প্রজাতির ছাগলের উপর গবেষণা করে। এর মধ্যে ব্লাক বেঙ্গল ছাগল কে অন্যতম সেরা প্রজাতি হিসেবে এই সংস্থা ঘোষণা করে। 

ব্লাক বেঙ্গল ছাগল সাধারণত কচি ঘাস ও লতা পাতা খেতে পছন্দ করে। শুষ্ক ও উচু জায়গায় থাকতে এরা পছন্দ করে। বাংলাদেশ, ভারত ও আফ্রিকার বিভিন্ন জায়গায় এদের পাওয়া যায়। বাংলাদেশে দীর্ঘ দিন ধরে বাস করায় এদেশের আবহাওয়ার সাথে এরা নিজেদের বেশ ভালো ভাবে মানিয়ে নিয়েছে। ব্লাক বেঙ্গল ছাগল এখন বাংলাদেশের স্থানীয় প্রজাতির ছাগল হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে। 

তোতাপুরি ছাগল

ছাগলের বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে তোতাপুরি ছাগল অন্যতম জনপ্রিয়। তোতাপুরি ছাগল দেখতে খুব সুন্দর। এই ছাগলের মুখের আকৃতি দেখতে অনেকটা তোতা পাখির মতো। এজন্য এর নাম তোতাপুরি ছাগল। 

মাংস উৎপাদনের জন্য তোতাপুরি প্রজাতির ছাগল জনপ্রিয়। এরা সাধারণত বিশাল আকৃতির হয়ে থাকে। এদের ওজন প্রায় ৮০-৯০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। তোতাপুরি ছাগল পালন অন্যান্য প্রজাতির ছাগল পালনের থেকে অধিক লাভবান। এজন্য প্রচুর মানুষ তোতাপুরি ছাগল পালনের দিকে ঝুকছে।

যমুনাপাড়ি ছাগল বা রাম ছাগল

ছাগলের উন্নত প্রজাপতি গুলোর মধ্যে যমুনাপাড়ি ছাগল বা রাম ছাগল অন্যতম। অধিক মাংস ও দুধ উৎপাদনের জন্যে যমুনাপাড়ি ছাগল পরিচিত। একটি যমুনাপাড়ি ছাগল বা রাম ছাগলের খাসীর ওজন প্রায় ১২০ কেজি ও ছাগীর ওজন প্রায় ৯০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। যা অন্যান্য প্রজাতির তুলনায় অনেক বেশি। যমুনাপাড়ি ছাগল প্রায় ২ লিটার পর্যন্ত দুধ দিয়ে থাকে। 

এছাড়াও এরা একসাথে দুইয়ের অধিক বাচ্চা দিয়ে থাকে। বর্তমানে যমুনাপাড়ি ছাগল বা রাম ছাগল পালন অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এদের আকৃতি তুলনামূলক ভাবে বড় হওয়ায় এদের রাম ছাগল বলা হয়। এদের নাক কিছুটা উচু হয়ে থাকে।

ছাগল পালন পদ্ধতি

আমাদের দেশে সাধারণত ছাগল পালন একটি লাভজনক পেশা। ছাগলকে বলা হয় গরিবের গাভী। গাভী পালন করার জন্য বেশি মূলধন ও জায়গার প্রয়োজন। কিন্তু অল্প মূলধন ও জায়গা হলেই ছাগল পালন করা সম্ভব। এজন্য গ্রাম বাংলার অধিকাংশ মানুষই ছাগল পালন করে থাকে। 

আমাদের দেশে অধিকাংশ মানুষ মুক্ত পদ্ধতি তে ছাগল পালন করে থাকে। অর্থাৎ সারাদিন ছাগল মাঠে ঘাস খায় ও রাতে তাদেরকে কোন ঘরে রাখা হয়। এভাবে ছাগল পালন করলে ছাগলকে অতিরিক্ত কোন খাবার সরবরাহ করা হয় না।

কিন্তু আবদ্ধ পদ্ধতি তে ছাগল পালন করলে তাদের খাবার সরবরাহ করতে হবে। ঘাস, লতাপাতা ও বিভিন্ন ধরনের দানাদার খাবার সরবরাহ করা হয়। নিদিষ্ট একটি ঘরে ছাগল গুলোকে আবদ্ধ করে রাখা হয়। এই পদ্ধতি তে খরচ বেশি হয়।

আবার অর্ধ-আবদ্ধ পদ্ধতি তে ছাগল পালন করলে নিদিষ্ট সময়ে ছাগল গুলোকে বাইরে ঘাস ও লতাপাতা খাওয়ার জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু নিদিষ্ট সময় পর এদের আবদ্ধ করে রাখা হয়। এসময় এদের সবুজ ঘাস, লতাপাতা ও দানাদার খাবার সরবরাহ করা হয়। 

আমাদের দেশে অধিকাংশ মানুষ মুক্ত পদ্ধতি তে ছাগল পালন করে থাকে। এই পদ্ধতি সবচেয়ে বেশি লাভজনক। এই পদ্ধতি তে ছাগলের রোগ বালাই কম হয়। এছাড়াও মুক্ত পদ্ধতি তে খরচ কম লাগে।

ছাগলের খাদ্য তালিকা

ছাগল সাধারণত সবুজ ঘাস ও কচি লতা পাতা খেতে পছন্দ করে। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের দানাদার খাবার ও এদের খেতে দেওয়া হয়। এসব খাবার সরবরাহ করলে ছাগলের দুধ ও মাংস উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। ছাগলের দুধ বৃদ্ধির ঔষধ না সরবরাহ করে এসব খাবার সরবরাহ করলে ছাগলের দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও ছাগল কে কৃমি মুক্ত রাখতে হবে। 

আমরা এতক্ষণ ছাগল সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানলাম। ছাগল আমাদের গৃহপালিত পশু গুলোর মধ্যে অন্যতম। ছাগলকে গরীবের গাভী বলা হয়। ছাগল আমাদের দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। দেশে আমিষের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে ও রপ্তানি করা হচ্ছে। দিন দিন ছাগল পালন আমাদের দেশে বৃদ্ধি পাচ্ছে।


Post a Comment

Previous Post Next Post